বঙ্গভঙ্গ রদ হয় কোন সালে?
বঙ্গভঙ্গ রদ হয় কোন সালে?
- ক. ১৯১১ সালে
- খ. ১৯১২ সালে
- গ. ১৯০৮ সালে
- ঘ. ১৯০৯ সালে
সঠিক উত্তরঃ ১৯১১ সালে
বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গের প্রভাব অপরিসীম। প্রশাসনিক কারণে বঙ্গভঙ্গ করা হলেও ক্রমশ তা ব্রিটিশ শাসন নীতিকে সাহায্য করে। কেননা বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমেই বাংলার হিন্দু ও মুসলমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলমানদের রাজনৈতিক সচেতনতা প্রকাশ পায়। স্বদেশী আন্দোলন সাময়িকভাবে প্রভাব প=বিস্তার করলেও দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর হয়নি। ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো সংস্কার মুসলমানদের পৃথক নির্বাচনের দাবিকে স্বীকৃতি দিরে রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন ধারার সূচনা হয়।
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে বাংলা প্রদেশ গঠিত ছিল। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর ভারতের বড়লাট লর্ড কার্জন এক ঘোষণার বাংলা প্রদেশকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেন। এ ঘটনা বঙ্গভঙ্গ বা বঙ্গ বিভাগ নামে পরিচিত। বঙ্গভঙ্গ অনুযায়ী বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ এবং আসাম নিয়ে গঠিত হয় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ। এ নবগঠিত প্রদেশের রাজধানী হয় ঢাকা। অন্য দিকে পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিম বাংলা প্রদেশ, যার রাজধানী হয় কলকাতা। বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব ১৯০৫ সালে কার্যকর করা হলেও এ প্রস্তাবউত্থাপিত হয়েছিল সরকারিভাবে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে।
বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করা হলে বাংলার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। মনে করা হয় যে, বাংলার জনগণকে বিভক্ত ও দুর্বল করে ব্রিটিশ শাসন শক্তিশালী করাই ছিল বঙ্গভঙ্গের মূল উদ্দেশ্য। যেদিন সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা করা হয় সেদিন কংগ্রেস দেশব্যাপী শোক দিবস পালন করে। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে হরতাল পালিত হয় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরামর্শে রাখী বন্ধন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বাঙালিদের ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ বাংলার মাটি, বাংলার জল গানটি রচনা করেন। শুরুতে বাংলার মুসলমান নেতৃবৃন্দের একাংশ বঙ্গভঙ্গের বিরোধতা করেন। মৌলভি আব্দুল রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কলকাতা রাজাবাজারে জনসভায় নেতৃৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। কিন্তু খুব শীঘ্রই মুসলমানগণ বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানান। ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ প্রথম বঙ্গভঙ্গকে মুসলমানদের স্বার্থের স্বপক্ষে বলে মত প্রকাশ করেন। পূর্ববঙ্গে ফজলুল হক, ধনবাড়ীর জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী বঙ্গভঙ্গকে স্বাগত জানান এবং নবাব সলিমুল্লাহর বক্তব্যের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দেন। মুসলমান নেতৃবৃ্ন্দ পূববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে ব্যাখ্যা দেন।
পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে বঙ্গভঙ্গ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আর এ কারনেই তারা একে স্বাগত জানান। বাংলা প্রদেশ বিভক্ত হওয়ার ফলে ঢাকা পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। বঙ্গভঙ্গের অব্যবহিত পরেই নতুন নতুন সুরম্য অট্টালিকা, হাইকোর্ট ভবন, সেক্রেটারিয়েট, আইন পরিষদ ভবন, কার্জন হল প্রভৃতি নির্মিত হতে থাকে। আর তাই অচিরেইএ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। হিন্দু নেতাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ব্রিটিশদেরকে বঙ্গভঙ্গ রদ করার স্বপক্ষে আনতে বাধ্য করে।
বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়েছিল ১৯১১ সালের ১২ ই ডিসেম্বর।
এ সম্পর্কিত আরো প্রশ্ন দেখুন
- বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার (মূল রূপকার বা নকশাকার) কে?
- বাংলাদেশের কোন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের নিজস্ব বর্ণমালা ও ভাষা আছে?
- ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত মোট ছিটমহলের সংখ্যা কতটি?
- বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প কোথায় অবস্থিত?
- স্যাটেলাইট প্রেরণকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশর অবস্থান কততম?